December 27, 2024, 2:53 pm
ড. আমানুর আমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক কুষ্টিয়া/
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উন্মোচনের পর ইতোমধ্যে বদলে যাওয়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল একই সেতুর উপর ভিত্তি করে ট্রেন চলাচলকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত হচ্ছে আরেক দফা। সময় শুধু অপেক্ষার। বছরের ব্যবধানে দুটি প্রাপ্তি আনন্দের বন্যা বয়ে দিয়েছে পুরো অঞ্চল জুড়ে। ২১ জেলার মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে আবেগ-উচ্ছাস। সাধারণ মানুষ এটাকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য শেখ হাসিনার দ্বিতীয় উপহার হিসেবে দেখছেন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল ১ নভেম্বর হচ্ছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। শুরু হচ্ছে সেই স্বপ্নের ট্রেন চলাচল। রেলওয়ে কতৃপক্ষ জানাচ্ছে, খুলনা থেকে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও পরদিন ২ নভেম্বর বেনাপোল থেকে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি খুলনা ছাড়বে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে এবং ঢাকা পৌঁছাবে ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। খুলনা থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে দৌলতপুর, নোওয়াপাড়া, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে থামবে। পরদিন অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে নতুন রুটে যাত্রা শুরু করবে ‘বেনোপোল এক্সপ্রেস’। ওই দিন ট্রেনটি বেনাপোল ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। অন্যদিকে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌঁছাবে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে।
সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত চলা ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’, ঢাকা থেকে যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত চলা ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ বঙ্গবন্ধু সেতুর বদলে পদ্মা সেতু হয়ে চলবে। এর পাশাপাশি রাজশাহী থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পর্যন্ত ‘মধুমতি এক্সপ্রেস’ নামে যে ট্রেনটি চলাচল করছে, সেটির চলার পথ বাড়িয়ে ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে রাজশাহী যোগাযোগেও রেলে নতুন একটি পথ চালু করতে যাচ্ছে পদ্মা রেল সেতু। এ তিন রুটের ট্রেন চলাচল পর্যবেক্ষণ করে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়বে।
এই রেল সেতু ঢাকা-খুলনা রুটের দূরত্ব কমিয়ে দিতে যাচ্ছে ২১২ কিলোমিটার।
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর প্রায় ১০ মাস পর গত ৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো সেতু অতিক্রম করে পরীক্ষামূলক ট্রেন। সেদিন একটি গ্যাং কার এবং তিন মাস পর গত ৭ সেপ্টেম্বর কমলাপুর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়। এই প্রকল্পের নির্মাণ খরচ ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল। এই প্রকল্পে নতুন রেল লাইন তৈরি হয়েছে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলায়। লাইনের দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ২২৬ দশমিক ৯৫১ কিলোমিটার। নতুন স্টেশন সংযুক্ত হয়েছে ১৪টি। পুরো লাইনের আওতায় পুরনো ছয়টি স্টেশনকে অন্তভূক্ত করা হয়েছে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী জানান, এখনও যেহেতু নির্মাণাধীন সব লাইনের কাজ শেষ হয়নি। পুরোপুরি চালু হলে তাই এই হিসেব আরও পরিমার্জিত ও সহজ হবে। যশোরের চেঙ্গুটিয়া থেকে নড়াইল পর্যন্ত রেলসড়কের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর থেকে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকায় যাবে ট্রেন। সম্পূর্ণ রেলপথ নির্মাণ না হওয়ায় বিকল্প পথে অর্থ্যাৎ মাওয়া থেকে ফরিদপুর-রাজবাড়ী-পোড়াদহ হয়ে ট্রেন যাবে যশোর। বেনাপোল থেকে ঢাকা যাবে একই পথে। আপাতত পোড়াদহ হয়ে ঢাকা পৌঁছাতে সময় একটু বেশি লাগবে। তবে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকার রেল যোগাযোগ চালু হলে বদলে যাবে বন্দরের চিত্র। তখন সময় আরও কম লাগবে।
ইতোমধ্যে, খুলনা বিভাগের বিভিন্ন রেল স্টেশনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, মানুষ উচ্ছসিত। তারা আগ্রহী। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা স্টেশনে যোগাযোগ করছেন। জানতে চাচ্ছেন টিকেট পাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে। এমন তথ্য জানালেন খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাসুদ রানা।
ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিবর্তন/
পদ্ম সেতু একদফা পরিবর্তন এনে দিয়েছিল পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। সাধারণ যাতায়াত করে দিয়েছিল সহজতর। নতুন এই ট্রেন চলাচল সাধারণ যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
হিসেব বলছে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ইতোমধ্যে বদলে গেছে এই অঞ্চলের বন্দরগুলোর সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থা। আগে বেনাপোল থেকে দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকা যেতে পণ্যবাহী ট্রাকের সময় লাগতো এক থেকে দুই দিন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় যাচ্ছে চার-পাঁচ ঘণ্টায়। একই সময়ে ঢাকা থেকে বেনাপোল পৌঁছাচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক। যাত্রী পরিবহনে এসেছে পরিবর্তন। যাত্রীবাহী বাসে বেনাপোল থেকে ঢাকা পৌঁছাতে আগে সময় লাগতো আট থেকে ১৫ ঘণ্টা। এখন চার-পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকায় যাচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে সময় যেমন বাঁচছে তেমনি এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় গতি এসেছে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী জানান, মতে, এটা শুধু দুরত্ব কমাতে যাচ্ছে তা নয়। িেপরা যোগযোগ ব্যবস্থাতেই আমূল পরির্বতন আনতে যাচ্ছে। তিনি বলেন সবথেকে বেশী সুবিধা হতে যাচ্ছে পণ্য পরিবহন সেক্টরে। তার মতে, মোট জ্বালানীর বাড়তি ব্যয়ের বড় অংশ সাশ্রয় হলে পণ্য মূল্য সূত্র ধরেই কমে যাবে। এজন্য পরিবহনের পুরো ব্যবস্থপনায় স্বচ্ছতার উপর জোর দেন তিনি।
বেনাপোলের ব্যবসায়ী একেএম মতিনুর রহমান জানান, ‘ভারত থেকে আমদানী করা পণ্য সহজে ঢাকা নেয়া যাবে। আবার ঢাকা থেকে পণ্যগুলো সহজ খরচে বেনাপোলে আসতে পারবে বলে এই ব্যবসায়ীর বিশ্বাস। তিনি বলেন পণ্য পরিবহনে এখন একধরনের অস্থিরতা চলছে বিশেষ করে জ্বালানী খরচের অনিশ্চিত মূল্য বৃদ্ধির কারনে। এই ট্রেন যোগাযোগ এই অস্থিরতা অনেকাংশে কমিয়ে দেবে তিনি মনে করেন।
ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে বলা হতো অবহেলিত জনপদ। এই অবস্থা আর থাকবে না। পদ্মা সেতু ইতোমধ্যে তা দেকিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। ব্যবসা-বাণিজ্য স¤প্রসারিত হবে কর্মসংস্থানের পথ খুলবে।
যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কৃষিনির্ভর যশোর অঞ্চলের কৃষিখাত আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। যশোর-সাতক্ষীরা অঞ্চলের মাছের পাশাপাশি গদখালী ও ঝিকরগাছার ফুল, বিভিন্ন ধরনের সবজি, নারিকেল ও কাঁঠালসহ কৃষিপণ্য সহজে পৌঁছে যাবে ঢাকায়। দ্রুত কৃষিপণ্য ঢাকায় পৌঁছালে এই অঞ্চলের কৃষকরা উপকৃত হবেন।’
সহজ হয়ে উঠবে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা /
ইতোপূর্বে দেখা গেছে, ঈদসহ প্রতিটি উৎসবে ঢাকা থেকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণের জেলাগুলোতে যেতে মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হত। সেই তিক্ত সড়ক যাত্রার অবসান হবে বলে মনে করেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান। তিনি বলেন এসব জেলাগুলোর সড়কের চিরচেনা অস্থিরতা কমে যাবে। যাত্রী হয়রানি বন্ধ হবে। জনগনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় কমে যাবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন ট্রেনের সেবাসমুহ আরও উন্নত করার উপর গুরুত্ব আরোপ
Leave a Reply